পৃথিবীটা গোল তাই অরিন এর সাথে দেখা হয়ে যাওয়াটা স্বাভাবিক, কিন্তু এভাবে দেখা হয়ওয়াটা প্রায়শই অস্বাভাবিক যেন মনে হচ্ছে এই প্রথম কোনো মেয়ে কে দেখছি । দীর্ঘ ৫ বছর পর অরিন কে নিয়ে আর ও একটা নতুন গল্প আমার স্মৃতির পাতা ভারী করবে এটা কখনো ভাবিনি । তবুও হয়ে গেলো কিছুই করার ছিল না কারণ এমন কিছু ঘটনা ঘটে যা নিয়ন্ত্রণের বাহিরে ।
দিনটি ছিল শুক্রবার ২০১৯ সালের ঈদুলফিতর এর ৩য় দিন অর্থাৎ ৭ ই মে । আগের দিন রাত ৪টা পর্যন্ত বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লেও কোনো কারণ ছাড়াই সকাল সকাল ঘুম ভেঙ্গে যায় । অনেক চেষ্টা করে ও ঘুম না আসায়, হাতে ব্রাশ নিয়ে বাড়ি থেকে একটু দূরে মেইন রোড এর পশে দাঁড়িয়ে ব্রাশ করছিলাম আর একটা রিক্সা খুজতেছিলাম বাজারে গিয়ে সকালের নাস্তা করবো বলে । হঠাৎ খেয়াল করলাম একটা রিক্সা আসছে আমি হাত তুলতেই কেউ একজন বলে উঠলো এসো উঠে এসো । সামনের দিকে তাকাতেই আমি অবাক হয়ে চেয়ে রইলাম । এ আমি কাকে দেখলাম সত্যিই কি সে অরিন ? মনের মধ্যে একগাদা কথা জমে গেলো সাতে একগাদা প্রশ্নও । বেখেয়ালে কখন যে রিক্সায় উঠে অরিন এর পাশে বসেছি নিজেও জানিনা । অরিন কে দেখে আমার ওকে জড়িয়ে ধরে ডুকরে কাদার কথা ছিল কিন্তু কেন জানিনা অরিন কে দেখে আমার খুব ভালো লাগছে মনে হচ্ছে পৃথিবীর মধ্যে আমিই একমাত্র সুখী ব্যাক্তি ।
হঠাৎ
অরিন: কেমন আছো?
আমি: আলহামদুলিল্লাহ ভালো । তুমি কেমন আছো?
অরিন: আল্লাহতালা অনেক ভালো রেখেছেন । তুমি অনেক মোটা হয়ে গেছো, অনেক সুন্দরও হয়েছো ।
আমি: খুব না একটু ।
অরিন: আমাকে দেখো
আমি: তুমি অনেক পরিবর্তন হয়েগেছো । একটু কালা হয়ে গেছো, মুখে বয়সের ছাপ পড়লেও মায়াটা এখনো কাটেনি ।
যার জন্য এখনো আমার মনের এক কোনায় তোমাকে খুব যত্ন করে রেখেছি।
অরিন: তাইনাকি?
আমি: হুম হয়তো জানো, হয়তো অনুভব করতে পারো যে আমি এখনো তোমাকে কতটা ভালোবাসি । আচ্ছা তোমার কোলে এই কিউট বাবুটা কে?
অরিন: ও আমার মেয়ে অরিত্রি ।
আমি; আমার কোলে দিবে?
অরিন: তোমার কোলে যাবেনা । ও ছেলেদের কোলে যায় না । দেখতে কার মতো হয়েছে বলতো
আমি অরিত্রীর দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি আর ভাবতেছি, এটা কি করে সম্ভব । ওর চোখ দুটো একদম ওর মায়ের মতো হয়েছে। একটু কাতু কুতু দেওয়ায় সামনের ২টা দাঁত বের করে একটু মুচকি হাসি দিলো যে হাসি টা আমার কাছে অচেনা ছিল । আমি জিজ্ঞেস করতেই অরিন বলে উঠলো হাসি টা একদম ওর বাবার মতো হয়েছে ।
সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে ভাবনার জগৎে হারিয়ে গেলাম । হঠাৎ অরিন বললো তোমার মোবাইল টা দাও তো । আমি মোবাইল দিতেই বলে উঠলো পাসওয়ার্ডটা কি এখনো আমার নামে আছে? আমি বললাম হুম। গ্যালারিতে সব ছবি গুলো দেখে অরিন বললো তুমি এখনো কোনো রিলেশান করো নি কেন? আমি বললাম তুমি কি করে বুঝলে যে আমি এখনো কোনো রিলেশানে জড়াইনি । অরিন বললো তুমি এখনও তোমার ফেসবুকের পাসওয়র্ডটা পরিবর্তন করোনি, আমি প্রতিদিন তোমার ফেসবুকের এস এম এস চেক করি শুধু মোবাইল টা চেক করা বাকি ছিল ।
আমি অরিন এর প্রশ্ন টা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলাম, বললাম আমরা কোথায় যাবো? অরিন বললো ওইযে সামেন মা দাঁড়িয়ে আছে আমি মা কে নিয়ে হাসপাতালে যাবো । হাসপাতাল এর কথা শুনতে আমি অবাক হয়ে গেলাম, অরিন আমার চোখের ভাষা বুঝতে পেরে কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই বলে ফেললো যে ওর আম্মার জন্য যাচ্ছে । অরিন রিক্সা ওয়ালা কে থামতে বললো । তার পর ২ জন মুখ মুখী দারালাম, অরিন বললো বোলো এখনো রিলেসন করোনি কেন ? আমি বললাম যে সত্যি কথা বলতে তোমার মতো এমন কারো দেখা এখনো পাইনি, তোমার মতো এমন মায়া আমি আর কারো মুখে দেখতে পাইনি। অরিন কিছুক্ষন চুপ থাকলো, হয়তো আমাকে থাপ্পড় মারতে চেয়েছিলো কিন্তু পারেনি, হাতটা মাথার রেখে চুল গুলো আউলায় দিয়ে বললো আজ তুমি যেমন আমাকে দেখে অনেক খুশি যে আমি অনেক ভালো আছি ঠিক আমি ও সেই সুখ টা পেতে চাই । রিলেশান না করলেও আমি চাই তুমি বিয়ে করো । আর হা আমার মতো কাউকে খুঁজে পাবে এমনটা না ও হতে পারে, যাকে বিয়ে করবে তার মধ্যে আমাকে খুঁজে নিয়ো, অনেক সুখী হবে যেমনটা আমি হয়েছি ।
আসি, ভালো থেকো । আল্লাহতালা চাইলে হয়তো আবারও দেখা হবে ।